আমাদের তারুণ্যের অঞ্জন দত্তটা

কর্তৃক TzuqiivcDuX
০ মন্তব্য ৯১ ভিউস

তখনও মধ্যবিত্ত বাঙালিরা এক ধরনের পারিবারিক বা প্রেম-বিরহের গান শোনার অভ্যাসে ছিল। সুরেও ছিল মেলোডির আধিপত্য। নব্বইয়ের দশকে গানের সেই ধারায় হঠাৎ পরিবর্তন আসে। গিটার হাতে মুখে খোঁচা-খোঁচা দাড়ির এক মধ্যবয়সী যুবক গাইতে শুরু করলেন। সুরে মেলোডি আর রকের মিশেল, তাই মানুষের আলাদা করে খুঁজে নিতেও বেগ পেতে হলো না। গানের কথায় যেমন ছা-পোষা জীবনের গল্প, তেমনি আবার আছে পাহাড়ে হারানো ছেলেবেলা খুঁজে ফেরার তাড়া। তাই সময় যতই গেল, ভিন্ন আবেগ নিয়ে হাজির হওয়া গান জনপ্রিয় হয়ে উঠল দিন দিন।

হ্যাঁ, অঞ্জন দত্তের শুরুর গল্পটা মোটা দাগে বলতে এমনই। তবে এভাবে আবার এতোটা সরলরেখা টেনে তার জীবনকে সহজীকরণ করলেও যে মস্ত বড় ভুল হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে জৌলুশ আর উত্থান-পতন-টানাপোড়েনের এক অদ্ভূত মিশেল ছিল তার জীবনে। পরবর্তীতে একজন শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য যা কাজ করেছে বড় নিয়ামক হিসেবে।

অঞ্জন দত্তের ছেলেবেলা কেটেছে দার্জিলিংয়ে। সেখানকার নামি স্কুল সেইন্ট পলসে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় তার। বাবার আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছেড়ে আসতে হয় সে স্কুল, এমনকি ছাড়তে হয় দার্জিলিংও।

কলকাতায় ফিরেও তার মন পড়ে ছিল সেই কাঞ্চনজঙ্ঘার পাহাড়ে। জীবনভর যে পাহাড়ি বাতাস তার মনের ঈষানকোণে বয়ে গেছে, তা প্রতিটা পরতে পরতে প্রকাশ করতেও কার্পণ্য করেননি কখনও। নিজের গানে-সিনেমায় ফিরে ফিরে গেছেন সেই ছেলেবেলায়, দার্জিলিংয়েই। সেখানে জীবনের প্রথম প্রেম-চুমু, সিগারেটে টান দেয়া, গিটারে সুর তোলা। সেই দার্জিলিংকে কীভাবে ভুলবেন অঞ্জন?

banner

ছোটবেলায় যে ঘুড়ি নাটাই থেকে ছিটকে গেছে, অঞ্জন দত্তের সে ঘুড়ি আজও উড়ছে আকাশে, নিজের মতো করে। জীবনে অভিনেতা হবার শখ ছিল খুব। হয়েছিলেনও। কিন্তু গণ্ডির ভেতর না থাকার যে প্রবণতা ছিল, তা-ই বোধহয় অভিনেতা অঞ্জনকে খুব উঁচুতে উঠতে দেয়নি। ট্র্যাকের বাইরে চিন্তা করা, ভিন্ন চরিত্র খুঁজে সেখানে নিজেকে মেলে ধরা, আশির দশকে এমন এক্সপেরিমেন্ট করার সাহস ক’জন দেখিয়েছেন, তা বোধহয় গুনে গুনে বলে দেয়া সম্ভব।

অভিনয়ে হোঁচট খেতে খেতে এগিয়ে যাওয়া অঞ্জনের ভেতর তো সুরের সুবাস ছিল। যে সুর তার হৃদয়ে গেঁথেছিল সেই পাহাড়ে, ছোটবেলায়; সেই গান আর সুরই নিয়ে গেল খ্যাতির চূড়ায়। ছোট ছোট শো করে এগিয়ে যাওয়া অঞ্জন ১৯৯৪ সালে বের করে ফেললেন অ্যালবাম ‘শুনতে কি চাও?’; এরপর ‘পুরোনো গিটার’, ‘ভালোবাসি তোমায়’, ‘কেউ গান গায়’। এরইমাঝে পশ্চিমবাংলা ছাড়িয়ে অঞ্জন চলে গেছেন দূরে-বহুদূরে। ততোদিনে আড্ডার প্রধান গান হয়ে উঠেছে ‘এটা কি টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন?

একদিক হয়ে বসে থাকার পাত্র অঞ্জন নন। গান নিয়ে তো অনেকই হলো, এবার পুরোনো আক্ষেপ ঘোঁচানোর পালা। অঞ্জন এবার হাত দিলেন সিনেমায়। একে একে বানালেন ‘বড়দিন’, ‘বো ব্যারাকস ফরএভার’, ‘দ্য বঙ কানেকশন’, ‘চলো লেটস গো’, ‘বোমকেশ বক্সী’, ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’র মতো সিনেমা। ঈশ্বর যখন তাকে গানে দু’হাত ভরে দিয়েছেন, সিনেমাতেও খালি হাতে ফিরলেন না। কমবেশি সব মহলেই প্রশংসা কুড়ালেন ফিল্মডিরেক্টর অঞ্জন।

এখনও সেই গান-সিনেমা-কনসার্ট নিয়েই কাটছে তার জীবন। সঙ্গী ছন্দা দত্ত আর একমাত্র ছেলে নীল। তিনজনের হাসি-গান-আড্ডায় কেটে যাচ্ছে একেকটা বছর। সেভাবে দেখতে দেখতে আরও একটা বছর কাটিয়ে দিলেন সবার প্রিয় অঞ্জন। ১৯ জানুয়ারি রোববার ৭১-এ পা রেখেছেন তিনি।

শুভ জন্মদিন, অঞ্জন দা’। আমাদের কৈশোর-তারুণ্য যেভাবে রাঙিয়েছেন, আরও বহু বছর সেভাবেই আপনার গান শুনতে চাই। আপনার গানে গানে গায়ে মাখতে চাই কাঞ্চনজঙ্ঘার হিম হাওয়া..।

You may also like

Leave a Comment

Meherpurer Alo: Your trusted source for timely, accurate, and insightful news from Meherpur and beyond.

প্রকাশক ও সম্পাদক

প্রধান সম্পাদকঃ জনাব হাজী মোঃ আলফাজ উদ্দিন
প্রধান উপদেষ্টাঃ জনাব মোঃ আলা উদ্দিন( আলা)

প্রধান প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জনাব মোঃ জাকির হোসেন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ জনাব মোঃ সেলিম রেজা
আইন বিষয়ক সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান (জিল্লু)
বার্তা সম্পাদকঃ মোঃ মাহবুল ইসলাম

সর্বশেষ পোস্ট

© ২০২৫ মেহেরপুরের আলো । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।
কারিগরি সহযোগিতাঃ দেশি হোস্টিং, আমঝুপি, মেহেরপুর।