বৃক্ষ ভিক্ষুক গহের আলীর তাল সাম্রাজ্যের গল্প

কর্তৃক TzuqiivcDuX
০ মন্তব্য ৮৯ ভিউস

ছবিতে রাস্তার দু’ধারে তালগাছের সারি। এই অসামান্য কাজটি করেছেন একজন ভিক্ষুক, গহের আলী। চলুন আজকে পাঠকদের বৃক্ষ ভিক্ষুক গহের আলীর গল্প শুনাই।

অসহায়কালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা গহের আলী ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রামের মেঠো রাস্তায় প্রখর রোদে হাঁটতে হাঁটতে যখন তিনি হাঁফিয়ে উঠতেন তখন একটি বাবলা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতেন। রাস্তাটি ছিল বেশ দীর্ঘ। অথচ সেখানে বাবলা গাছ ছিল মাত্র একটি। এই দীর্ঘ রাস্তা পার হতে তাঁর অনেক কষ্ট হতো। একদিন বিশ্রামকালে তিনি ভাবলেন, রাস্তার দুই ধারে গাছ লাগালে কেমন হয়? কিন্তু গাছের চারা কিনবেন কী দিয়ে, হাতে কোন টাকা নেই! মনটা মুষড়ে গেল তাঁর। তবে স্বপ্নটা জিইয়ে রইলো মনে। এরপর ভিক্ষা করতে গিয়ে এক বাড়িতে দেখলেন উঠোনে কয়েকটা তালের আঠি (বিচি)। তখন ভিক্ষার সাথে সেই তালের বিচি চেয়ে নিলেন এবং ফেরার পথে রাস্তার ধারে বিচিগুলো রোপন করলেন।

গহের আলী যৌবনের সময় দিন মজুরী করতেন কিন্তু বার্ধক্যের ভারে যখন কুঁকড়ে গেছেন তখন পেটের টানে একদিন ভিক্ষার থালা হাতে নেমে আসেন রাস্তায়। ভিক্ষার জন্য গহের আলী এ পাড়া ও – পাড়া ঘুরে বেড়াতেন সাথে থাকতো ভিক্ষার ঝুলি। দিন শেষে ভিক্ষার ঝুলায় চাল টাকা পয়সার বদলে বাড়ী ফিরতেন তালের আঁটি ভর্তি করে। সেই আঁটিগুলো পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কে একটি একটি সারি বদ্ধ ভাবে তালের আঁটি লাগাতেন। বাদ যায়নি কবরস্থান ও। এভাবেই ভীমপুর,বলিহার ইউনিয়ন জুড়ে তিনি ১২ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছেন। এভাবেই গড়ে উঠেছে গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য।

এরপর থেকে যখন যে বাড়িতে যেতেন সেখানে ভিক্ষার পাশাপাশি তালের বিচির খোঁজ করতেন এবং পেয়ে গেলে তা রাস্তার ধারে রোপন করে নিজের আশ্রয়স্থলে ফিরতেন। এভাবেই কেটে গেল অনেক বছর। এক সময় দেখা গেল এভাবে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের বলিহার সেতু থেকে খোর্দ্দ নারায়ণপুর সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার পাশে এবং এলাকার বিভিন্ন গোরস্থান ও খালি জায়গায় ১২ হাজার তাল গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন।

banner

দীর্ঘকাল ধরে তাঁর এই তাল গাছ লাগানোর খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ নিয়ে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। তখন বিষয়টি নজরে আসে সরকার ও পরিবেশবাদীদের। এর পরের বছর ২০০৯ সালে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক দেওয়া হয় গহের আলীকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পদক তুলে দেন ভিক্ষুক গহের আলীর হাতে। গহের আলী যখন জাতীয় পরিবেশ পদকে ভূষিত হন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৭ বছর। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি তাঁর প্রিয় গাছগুলোর মায়া কাটিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। গহের আলী আজ বেঁচে নেই! কিন্তু তাঁর লাগানো তাল গাছগুলো কেবল ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিককে শীতল ছায়া-ই দেয় না বরং বজ্রপাত থেকে অসংখ্য মানুষের প্রাণও রক্ষা করে থাকে। রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে কাটা হবে তাঁর তাল সম্রাজ্য।

যুগের পর যুগ ধরে গাছ কাটতে কাটতে প্রকৃতিকে আজ আমরা ফুঁসিয়ে তুলেছি।ফুঁসিয়ে তুলা প্রকৃতিতে আবারও প্রানের সঞ্চার ঘটাতে, আবার তাকে সবুজের রঙ্গে রাঙ্গাতে বিজ্ঞানীদের মতে এক লাখ কোটি গাছ লাগাতে হবে।
আমাদের ধরিত্রীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নওগাঁর নিঃস্বার্থ গহের আলীর মতো আরো অনেক গহের আলীর দরকার তাই আসুন আমরা সবাই আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপনের অঙ্গীকার করি। যে বৃক্ষ আমাদের দেশকে বাঁচাবে, আমাদের বাঁচাবে,আমাদের সন্তানদের বাঁচাবে।

গহের আলীকে জানাই হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি। মহান স্রষ্টা যেন তাঁর বিদেহী আত্মাকে শান্তিতে রাখেন।

You may also like

Leave a Comment

Meherpurer Alo: Your trusted source for timely, accurate, and insightful news from Meherpur and beyond.

প্রকাশক ও সম্পাদক

প্রধান সম্পাদকঃ জনাব হাজী মোঃ আলফাজ উদ্দিন
প্রধান উপদেষ্টাঃ জনাব মোঃ আলা উদ্দিন( আলা)

প্রধান প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জনাব মোঃ জাকির হোসেন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ জনাব মোঃ সেলিম রেজা
আইন বিষয়ক সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান (জিল্লু)
বার্তা সম্পাদকঃ মোঃ মাহবুল ইসলাম

সর্বশেষ পোস্ট

© ২০২৫ মেহেরপুরের আলো । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।
কারিগরি সহযোগিতাঃ দেশি হোস্টিং, আমঝুপি, মেহেরপুর।